
উত্তর কোরিয়া বৃহৎ পরিসরে বিমান প্রতিরক্ষা এবং বিমান হামলার মহড়া পরিচালনা করে এই অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। এই মহড়ায় প্রথমবারের মতো দেশটির তৈরি একটি নতুন আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত ছিলেন, সৈন্যদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং বিমানটি পরিদর্শন করেছিলেন।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, ১৫ মে কিম জং উন ১ম বিমান বিভাগের একটি উড়ন্ত রেজিমেন্ট পরিদর্শন করেন এবং ঘটনাস্থলে মহড়া পরিদর্শন করেন। তার সফরের সময় এক বিবৃতিতে কিম জোর দিয়ে বলেন যে, "সশস্ত্র বাহিনীর সকল ইউনিটকে অবশ্যই তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতিতে মৌলিক রূপান্তর ঘটাতে হবে, যাতে তারা সর্বদা সতর্ক এবং কার্যকরী প্রস্তুতি বজায় রাখতে পারে।" এই বিবৃতিগুলিকে আঞ্চলিক উত্তেজনার মুখে উত্তর কোরিয়ার সামরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কেসিএনএ জানিয়েছে, এই মহড়ার লক্ষ্য হলো "শত্রু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামিকাজে ইউএভি সনাক্ত, ট্র্যাক এবং ধ্বংস করার" সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আরও উন্নত করা। বিভিন্ন ফ্লাইট স্কোয়াড্রন, বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট, রাডার দল এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধক্ষেত্রের উপাদানগুলি সক্রিয়ভাবে এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল। এই ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণাত্মক ক্ষমতার একটি সমন্বিত প্রদর্শন হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
মহড়ার সময় প্রথম প্রদর্শিত নতুন আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রটির আনুষ্ঠানিক বর্ণনা এবং স্পেসিফিকেশন এখনও উত্তর কোরিয়া প্রকাশ করেনি। কিন্তু সামরিক পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছেন যে ক্ষেপণাস্ত্রটির সামগ্রিক নকশা প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাল্লা দিতে পারে। এই পাল্লার অর্থ হল এই ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়ার বর্তমান আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের তালিকার অনেক সিস্টেমের কর্মক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, নতুন ব্যবস্থাটি দক্ষিণ কোরিয়ার মোতায়েন করা আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, যার লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্রের পরিসর বৃদ্ধি করা এবং শত্রু বিমানকে আটকানোর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা।
আর্মি রিকগনিশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে নতুন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের বাহ্যিক নকশা PL-12 এর সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ, যা একটি বহির্মুখী-দৃশ্যমান-পাল্লার সক্রিয় রাডার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র যা চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (PLAAF) দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই মিলের কারণেই জল্পনা শুরু হয়েছে যে উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নে চীন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে থাকতে পারে। নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়ার মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের সাথে সংহত করা হবে বলেও দাবি করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ, যদিও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রটির আনুষ্ঠানিক প্রযুক্তিগত বিবরণ এখনও জানা যায়নি, তবে এর বাহ্যিক নকশায় PL-29 এর মিল ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা এবং ক্ষমতার দিক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুকরণের প্রচেষ্টা নির্দেশ করতে পারে। এটিকে উত্তর কোরিয়ার বিমান শক্তি আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।